সকল প্রসংশা মহান রবের। আমি জেনে আজ খুব আনন্দিত এই জন্য যে, বাতাকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আজ জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সৃজনশীলতায় দক্ষতার সাথে বাতাকান্দি আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছে। এই জন্য আমি প্রতিষ্ঠানের সকলকে আমার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। নিয়মিত অধ্যায়নের পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রীড়ানুশীলন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেকে মাদক, সাইবার অপরাধ, মূল্যবোধ অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি সহ নানাবিদ অপরাধ কর্মকান্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে। একটি মানসম্পূর্ণ বিদ্যাপীঠ পারে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করতে। সেই ক্ষেত্রে বাতাকান্দি আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ সেনবাগের মধ্যে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনোরম পরিবেশ, বিশাল ক্যাম্পাস, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও একদল তরুন মেধাবী শিক্ষকের সমন্বয় গড়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকশিত জ্ঞান, বিজ্ঞানের সমন্বয় গঠিত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি বিশিষ্ট দানবীর মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কে, যার একক দানকৃত ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত বাতাকান্দি আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ। দীর্ঘয়ায়ু কামনা করছি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ কবির উল্যাহ সাহেবের, যিনি অন্ধকার সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। আমি আশা করি আগামীতে বাতাকান্দি, দক্ষিণ গোরকাটা, উত্তর গোরকাটা, বাতানিয়া, অর্জুনতলা ও দ: মানিকপুরের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পরিশেষে আগামীর দক্ষ মেধাবী মানব সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এই প্রত্যাশায় আমি প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল কামনা করি।
সেনবাগ উপজেলার উত্তর পশ্চিম কোণে বাতাকান্দি ও গোরকাটা গ্রামের সীমান্তবর্তী এমন একটি স্থান যেই জায়গাটি কোন এক সময় শিয়াল কুকুরের ডাকে মুখরিত ছিল । এমন একটি জায়গায় প্রদীপ জ্বালানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন জনাব ড. মুহম্মদ কবির উল্যাহ । স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য এলাকাবাসীর কিছু সমাজ হিতৈষী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি গণের প্রচেষ্টায় মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহেবের দানকৃত এক একর জমির উপর ১৯৯৩খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয় বাতাকান্দি আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় , সেই দিনকার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি আজ বাতাকান্দি আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ হিসাবে পরিচিত । সুনাগরিক গঠনের ক্ষেত্রে আমরা অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । প্রতিষ্ঠানটির দাতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠান গুণগ্রাহী ব্যক্তি বর্গ যারা ইন্তেকাল করেছেন আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ।
আমি কৃতজ্ঞ চিত্রে স্মরণ করছি জনাব ড. মুহাম্মদ কবির উল্যাহ , দলিলুর রহমান , গোলাম ছারওয়ার রিপন , আবু তাহের সরকার , আবু বক্কর ছিদ্দিক , মরহুম আবদুল মালেক , হাজী মোকরম আলী ও আবু তাহের মেম্বার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে যাদের সুনিপুন হাতের ছোয়ায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের চৌ-চালা দুইটি টিনের ঘর সহ শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ সত্যি প্রশংসার দাবিদার । তারই সূত্র ধরে আমি চেষ্টা করেছি এই স্কুল এন্ড কলেজটিকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে বিজ্ঞান মনস্ক ও সৃজনশীল মেধা বিকাশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়তে । আমি আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে অদ্যবধি পরিচালনা কমিটির সাথে সম্পৃক্ত সম্মানিত সভাপতি , অভিভাবক সদস্যবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ , শিক্ষানুরাগী , রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ , সমাজ সেবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষ করে নোয়াখালী-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোরশেদ আলম , সেনবাগ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহম্মেদ চৌধুরী , ড. মুহাম্মদ কবির উল্যাহ , সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু জাফর টিপু , সমাজ সেবক হাসান মন্জুর , সেনবাগ সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আবু নাছের দুলাল , এমপি মহোদয়ের পিএস এস.এ আজাদ সুমন প্রমুখ ব্যক্তি গণের প্রতি ।
যাদের সার্বিক সহযোগীতায় এই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সহ সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের বড় প্রাপ্তি সম্প্রতি নবনির্মিত চার তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্ভোধন করেছেন। এই জন্য আমি আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই । আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামীর তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ মেধাবী মানব সম্পদ সৃষ্টিতে আমাদের প্রতিষ্ঠান গর্বিত অংশীদার হতে পারবে । পরিশেষে আমি আমার প্রাক্তন ছাত্র / ছাত্রী , অভিভাবক , সমাজ সেবক , রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সকলের নিকট সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি ।
১৯৯০ এর দশকের শুরুতে আমাদের বাতাকান্দি গ্রামের উন্নয়নের চিন্তা ভাবনা থেকে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার ধারণার জন্ম হয়। তখন এ বিষয়ে সমাজের অনেকের সাথে মতবিনিময় করি। সবাই এক বাক্যে আমার প্রস্তাবে রাজী হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় স্বুল প্রতিষ্ঠার জায়গা নিয়ে। কারণ একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে কম পক্ষে এক একর জমির প্রয়োজন। এর পর জমি ভরাট করা, স্কুল গৃহ নির্মাণ করা, ছাত্রদের ক্লাসে বসার বেঞ্চ, শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য আনুষঙ্গকি আয়োজন অনেক টাকার প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে নানা প্রাসঙ্গিক দিক বিবেচনা করে স্কুলের স্থান হিসেবে গ্রামের দক্ষিণ বা পূর্ব দিকের মাঠ নির্বাচন করা হয়। কিন্তু আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কারো এক সাথে বা এক প্লটে এক একর জমি ছিলনা।
এমতাবস্থায় আমার ছোট ভাই আবু তাহের আমাকে জানায় যে আমাদের জেঠাত ভাই মাস্টার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহেব এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন। তিনি কোন এক সময় গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করতে উৎসাহী ছিলেন। তাই আমরা পরের দিন সকালে তাঁর বাড়ি গিয়ে গ্রামে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করার প্রস্তাব করি। তিনি নানা বিষয়ে আলোচনার পর স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি দান করতে সম্মত হন। তবে তিনি প্রস্তাব করেন পাশ্ববর্তী উত্তর গোরকাটা ও দক্ষিণ গোরকাটার অধিবাসীদের সাথে এ বিষয়ে মত বিনিময় করতে চান। ঠিক সেদিনই ২৫/১২/১৯৯৩ তারিখে সন্ধ্যার পর এই দুই গ্রামের মুরব্বীদের এ বিষয়ে আলাপ করার জন্য বাতাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিলিত হতে নিমন্ত্রণ করা হয়। উপস্থিত সবাই এক বাক্যে স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে সম্মত হন এবং সর্বাত্ত¡ক সহযোগীতার আশ্যাস দেন। সবার সামনে তিনি তাঁর বাড়ির সামনের জমিতে স্কুল করার সম্মতি দেন এবং তিনি স্বুলের নাম প্রস্তাব করেন ‘বাতাকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়‘। সবাই তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হন। এরপর অস্থায়ীভাবে ১৭/১/১৯৯৩ তারিখে আমরা বাতাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাইস্কুলের কার্যক্রম শুরু করি।
স্কুলের প্রথম শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করে বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাং নূরুল হুদা ও মিয়া বাড়ির চত্তার সাহেবের মেয়ে শিউলী। এরপর আমরা স্কুল ঘর তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বাতাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত পুরানো ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে নতুন স্থানে স্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য যে ঐ ঘরটি ছিল মরহুম খায়েজ আহমদ সাহেবের। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ কালে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঘরটি পুড়িয়ে ফেলে। ঐ পোড়া ঘরের জিনিষপত্র দিয়ে আমরা প্রথমবারের মত বাতাকান্দি প্রাইমারী স্কুল গৃহ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। পরবর্তীতে সরকার স্কুল ঘর দালান করায় ঘরটি পরিত্যক্ত হয়। এই ঘর ভেঙ্গে নেয়ার কালে গ্রামের কয়েকজন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সেনবাগ থানায় যায়। কিন্তু থানা র্কতৃপক্ষ পুরো ঘটনা জানার পর কোন মামলা গ্রহণ করেনি। পরন্তু তাদের তিরস্কার করে বিদায় করেছিলেন। পরবর্তীতে আমরা জনগণের কাছ থকেে কাঠ সংগ্রহ করে স্কুল ঘরটি বড় করে তেরী করি। এরপর পর্যায়ক্রমে স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী স্বীকৃতি সংগ্রহ করা হয়।
প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হয়, স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমার স্ত্রী সেলিনা আখতার। এরপর প্রধান শিক্ষক হন বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাং নুরুল হুদা। স্কুল প্রতিষ্ঠাকালে গ্রামের সবাই সর্বাত্বক সহযোগীতা করেছে। তবে কয়েক জন সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দলিলুর রহমান, গোলাম ছারওয়ার রিপন ও মাস্টার আবুল কাশেম। তরুণদের মধ্যে রয়েছে মো. সায়েমসহ কয়েকজন এবং গোরকাটার হাজী মোকারম আলী, সিদ্দিক মেম্বার ও আবুবকর। কিছুদিন আগে সরকার হাইস্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী খোলার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
তখন তৎকালীন হেডমাস্টার এবং বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাং নুরুল হুদা সরকারের এ পরিকল্পনা মোতাবেক বাতাকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে উন্নীত করার প্রস্তাব করে। আমি সানন্দে রাজী হই। তবে সঙ্গত কারণে তাকে সাবধান করি যেন আমাদের এই পরিকল্পনার বিষয়ে বাহিরের কেউ না জানে।নুরুল হুদা তার মেধা খাটিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কলেজ প্রতিষ্ঠার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং সফল হয়। এ কাজে সেনবাগ কলেজের প্রাক্তন ভিপি দুলাল সহ কয়েকজন তাকে সর্বাত্বক সহযোগীতা করে।
বর্তমানে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর শুভলগ্নে সবাইকে জানাই ধন্যবাদ এবং ভবিষ্যতের সফলতার জন্য সবাইর সহযোগীতা কামনা করি।
-ড. মুহম্মদ কবির উল্যাহ
এ স্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সুপরিকল্পিত পাঠ্যক্রম, সহ-পাঠ্যক্রম কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন যাতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিতে পারে।